ঢাকা, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ চৈত্র ১৪৩২, ১৬ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে সাংবাদিকতায় ভরসা

স্ত্রী হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কামাল

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন


আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে সাংবাদিকতায় ভরসা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাংবাদিকতা করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ ও নজরদারি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন, এ ধারণা থেকে স্ত্রীকে হত্যার পরে সাংবাদিকতাকে পেশা বেছে নেয় আশরাফ হোসেন কামাল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। ১৭ বছর পর বৃহস্পতিবার রাতে সাভার থেকে সাংবাদিক ছদ্মবেশে পলাতক হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কামালকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১১। 

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করলেও ১২ দিন পর শ্বশুরেরই সহায়তায় জামিন পায় সে। জামিন পাওয়ার পরের আত্মগোপনে চলে যায় কামাল। এই সময়ের মধ্যে তার সন্তানসহ পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। 

র‍্যাব মুখপাত্র জানান, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও থানা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আশরাফ হোসেন কামালকে (৪৭) গ্রেপ্তারের জন্য অনুরোধ করে র‍্যাবকে। তাঁদের অনুরোধের ভিত্তিতে মামলায় দেওয়া একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে বরিশালে অভিযান চালায় সংস্থাটি। তবে মোবাইল নম্বরটি আসামির নামেই রেজিস্ট্রেশন করা, কিন্তু ব্যবহার করছেন অন্যজন। আসামি দীর্ঘদিন ধরে নম্বরটি ব্যবহার না করায় কর্তৃপক্ষ সিমটি অপর ব্যক্তির কাছে রিপ্লেসমেন্ট সিম হিসেবে বিক্রি করে দেয়। ফলে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। পরে র‍্যাব সাইবার পেট্রলিং-এর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আসামির ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে। পরে আসামির শ্বশুরের কাছ থেকে তার ছবি শনাক্ত করলে জানা যায় এই কামালই প্রকৃত আসামি। পরে মাঠপর্যায়ে তথ্য যাচাই বাছাই করে গতকাল রাতে কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে পারিবারিক কলহের জেরে কামাল তার শিশুপুত্রের সামনেই স্ত্রী সানজিদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গোপন করতে মরদেহ ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সানজিদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে জানা গেলে সোনারগাঁও থানা-পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। মামলার তদন্তে জানা যায়, সিলিং ফ্যানের নিচে খাট ছিল। খাটের ওপর থেকে সিলিং ফ্যানের উচ্চতা খুবই কম ছিল। এমতাবস্থায়, সিলিং ফ্যানে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা সম্ভব নয়। পরে সোনারগাঁও থানা-পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। 

র‍্যাব মুখপাত্র জানান, প্রথম স্ত্রী সানজিদাকে হত্যার পর ছদ্মবেশে আশুলিয়ায় বসবাস শুরু করে কামাল। এখানে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। পাশাপাশি গ্রেপ্তার এড়াতে নামসর্বস্ব সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। বিভিন্ন পত্রিকার কার্ড তৈরি করে শুরু করেন সাংবাদিকতা। এ ছাড়া আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য পদ গ্রহণ করার পরে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হন। এর পাশাপাশি নিজে একটি কনসালটেন্সি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করে। ফার্মটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ যাচাইয়ের নিরীক্ষার কনসালটেন্সি করত। 


   আরও সংবাদ