ঢাকা, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩২, ২৫ জ্বমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

পেশার ভিন্নতা থাকলেও নির্বাচনী সহিংসতায় তারা সক্রিয়


প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন


পেশার ভিন্নতা থাকলেও নির্বাচনী সহিংসতায় তারা সক্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের সাতকানিয়া নির্বাচনী সহিংসতায় দুজন নিহত ও শতাধিক আহতের ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এলিট ফোর্স র‍্যাবের তিনটি ব্যাটালিয়নের যৌথ অভিযানে রাজধানীর ঢাকা, চট্টগ্রাম, বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এ সময় তাদের কাছ থেকে সহিংসতায় ব্যবহার করা তিনটি একনলা বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, একটি ওয়ান শুটার গান, ৪২ রাউন্ড গোলাবারুদসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। 

আজ মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তার সন্ত্রাসীরা ফুল বিক্রেতা, গাড়ি চালক, জমির দালাল, অফিস সহকারী, রাজমিস্ত্রি, সিএনজি চালকসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে থেকে সাতকানিয়া এলাকায় বিভিন্ন সময়ের সহিংসতার ঘটনায় জড়িত। তারা সকলেই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। তারা বিভিন্ন অস্ত্র চালনায় পারদর্শী। এ ছাড়া প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সাতকানিয়াসহ বিভিন্ন থানায় সহিংসতাসহ একাধিক অস্ত্র মামলা রয়েছে। 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়ায় অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে প্রার্থীদের অনুসারী পরিচয়ে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতা চালায় কয়েকজন যুবক। এই সহিংসতার ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রুজু করা হয়। 

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাচনী সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার র‍্যাব-২, র‍্যাব-৭ ও র‍্যাব-১৫ এর পৃথক অভিযানে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে বান্দরবানের গহিন জঙ্গল থেকে নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১৫। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অভিযান চালিয়ে মো. মোরশেদ ২৬, কোরবান আলী (৩৭) ও ইসমাঈল (৫৫) কে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তার চারজনের দেখানো মতে সাতকানিয়ার খাগরিয়া থেকে সহিংসতায় ব্যবহৃত উদ্ধার করা হয়। একই রাতে র‍্যাব-৭ এর অপর একটি অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে সহিংসতায় জড়িত মো. জসিম (২৪) কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জসিমের দেওয়া তথ্যে চট্টগ্রামের চান্দনাইশ থেকে (৬) মিন্টু (২৬) কে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সহিংসতার নেতৃত্বদান কারি কায়েসকে রাজধানী ঢাকার তেজকুনি পাড়া থেকে সহযোগী নুরুল আবছার (৩৩) সহ গ্রেপ্তার করা হয়। 

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের বারত দিয়ে খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার কায়েস গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করে আসছে। পাশাপাশি সাতকানিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিত। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করত। নাসির বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে তার দলের সদস্যদের সরবরাহ করত বলে জানা যায়। বর্ণিত সহিংসতার ঘটনায় তার নেতৃত্বে জসিম, মোর্শেদ, মিন্টু, আবছারসহ আরও শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালায়। সহিংসতা পরবর্তীতে সে ঢাকায় আত্মগোপন করে। নাসিরের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে। 

কমান্ডার মঈন জানান, র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর কায়েছ র‍্যাব কে জানিয়েছে সে নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়ায় অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। তার গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সহিংসতায় এভাবে অস্ত্র সরবরাহ করা হতো। কাজ শেষে অস্ত্র ফেরত দিলে তারা স্থানীয় কবরস্থান ও পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে এই অস্ত্র লুকিয়ে রাখত। 

যাদের পক্ষ হয়ে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে র‍্যাব কি ভাবছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে সহিংসতার তথ্য গণমাধ্যমের মাধ্যমে এসেছে। মূলত সেখানে দুজন প্রার্থীর হয়ে সহিংসতার চালিয়েছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যে দুইটি কেন্দ্রে এই সহিংসতা হয়েছে সেই দুই কেন্দ্রর ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। এই প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং তাদের সংশ্লিষ্টতা মূলত নির্বাচন কমিশনের বিষয়। যারা এখানে সংহিতা করেছে তারা এই দুই প্রার্থীর হয়ে এই কাজটি করেছে। শুধু প্রার্থীরা তাদের বলেছে এমন নয়, অনেক ক্ষেত্রে সমর্থকেরা অতি উৎসাহী হয়ে যায়। তারা তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যায়। 

প্রার্থীরা কি হামলার নির্দেশ দিয়েছে কি না, উত্তরে তিনি বলেন, সেটা আমরা জানি না। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা আমাদের অরকম কিছু বলে নাই। প্রার্থীরা তাদের ছবি দেখে বলছে তারা আমাদের লোক না। জাদের গ্রেপ্তার করেছি তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুসারী বলেছে। তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের পদের তথ্য পাইনি। বিভিন্ন ভাবে তারা দুই প্রার্থীরই অনুসারী ছিল। তারা তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া ছিল। এই সকল নির্বাচনে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ বা চক্র থাকে। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য, অনেক ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে তারা এই ধরনের কেন্দ্র দখল বা কাজ করে থাকে। কোনো প্রার্থী নির্দেশনা দিয়েছে কি না তারা আমাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেটা জানায় নাই। 

এই সহিংসতায় ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস কি বা কারা সরবরাহ করেছে অস্ত্র এবং এই ধরনের অস্ত্র কি এ সকল কর্মকাণ্ডে ভাড়া দেয়া হয় নাকি তাদেরকে সরবরাহ করা হয়, উত্তরে খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা জেটা জেনেছি কায়েস এই অস্ত্র একজনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে এসেছিল। তবে যার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিল তিনি আত্মগোপনে থাকার তাকে গ্রেপ্তার করা যায় নাই। আত্মগোপনে যাওয়ার কারণে এই অস্ত্রগুলো পুকুর পাড় মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশ কিছু আগ্নেয় অস্ত্রের ব্যবহার দেখেছি। এগুলো বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ হয়ে প্রবেশ করছে। 

যদি প্রমাণ মিলে গ্রেপ্তারকৃতরা নির্বাচনের দুই প্রার্থীর অনুসারী তবে দুই প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রথম আমরা তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন দিবে। 


   আরও সংবাদ