ঢাকা, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩২, ১৯ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

চোখেমুখে ফুটে ওঠা খুশির আভায় ভালোবাসার বসন্ত


প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১০:০৮ পূর্বাহ্ন


চোখেমুখে ফুটে ওঠা খুশির আভায় ভালোবাসার বসন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফুল ফুটুক আর না ফুটুক বাঙালির বসন্ত উদ্‌যাপন চলবেই। সোমবার পয়লা ফাল্গুনে শহুরে নাগরিক জীবনে বসন্ত উদ্‌যাপনের পাশাপাশি রং লেগেছিল ভালোবাসারও। একই দিনে বসন্ত এ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হওয়ায় নগরের প্রকৃতিতে না থাকলেও পথে পথে নেমেছে ভালোবাসার বসন্ত। শহুরে মানুষের চোখেমুখে ফুটে ওঠা খুশির আভা, বর্ণিল বসন আর আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়া আনন্দের বার্তাই বলে দিচ্ছে আজ বসন্তের প্রথম দিন।

সোমবার পয়লা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে রাজধানী সেজেছিল উৎসবের রঙে। ফাগুনের প্রথম প্রহরে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে ছিল নানা আয়োজন। ভালোবাসার আবেশেই এবার রাঙিয়ে ছিল পয়লা ফাল্গুন।

ফাগুনের প্রথম প্রহরেই নগরে বসন্ত উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নেয় জাতীয় বসন্ত উদ্‌যাপন পরিষদ। এ ছাড়া বসন্ত বরণে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সারা দেশেই চলছে নানা আয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে বসন্ত শোভাযাত্রা, আবির ও ফুলের প্রীতিবন্ধনীও। মঙ্গলবার রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের বকুলতলা, শিল্পকলা একাডেমি, বাহাদুরশাহ পার্ক, লক্ষ্মীবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠান।

শাহবাগ ফুল মার্কেটের সামনে দেখা যায়, দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে বাইরে বেরিয়েছেন আনোয়ার হোসেন। ফুলের দোকান দেখে লাল ফুলের মুকুটের আবদার করছে ছোট্ট আতিয়া। মেয়ের আবদারে হার মেনে বাবাও দোকানির কাছে লাল ফুলের মুকুটটা নিয়েই সযত্নে পরিয়ে দিলেন মেয়েকে। তাই দেখে ছোট ভাইটিরও ফুল চাই। তার অবশ্য হলুদ ফুল হলেই চলবে। 

আনোয়ার হোসেন জানালেন, ওরা ঢাকায় বড় হচ্ছে, বসন্তের প্রাকৃতিক ফুল দেখাতে না পারলেও প্রথম দিনে ফুল কিনে দিয়ে তাদের বসন্তের সঙ্গে পরিচয় করাতে এনেছি। 

ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে এবার কোন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়নি। এরপরেও মানুষের ঢল নেমেছে সেখানে। ফাল্গুন মানেই যেখানে ভালোবাসা সেখানে কোন আয়োজন উপলক্ষ হতে পারে না বলে মনে করেন অনেকেই। চার বান্ধবী ঘুরতে এসেছেন রবীন্দ্র সরোবরে তাদের মধ্যে একজন ত্বন্বীতা জামান বললেন, এখন আমাদের কাছে একটা উপলক্ষই যথেষ্ট ঘোরাঘুরি করার জন্য। এর জন্য বিশেষ কোন আয়োজনের প্রয়োজন হয় না। পয়লা ফাল্গুন সব সময়ই সবার জন্য অনেক আনন্দঘন একটা দিন আর সঙ্গে ভালোবাসা দিবস। এগুলো আলাদা ব্যাপার না। 

সকাল থেকে খুব যত্ন করে সেজেছেন রেশমি। এরপর এসেছেন সরোবরে। প্রতিদিনই সাজেন তবে আজ অন্যদের মতন তার সাজটাও কিছুটা বিশেষ। রেশমি বললেন, আমরা তো হিজড়া সমাজ, সমাজ বহির্ভূত বলা চলে। আমরা এখানে প্রতিদিনই আসি, মানুষের কাছে টাকা চাই। 

অনেকে ভয় পায়, অনেকে টাকা দেয় অনেকে আবার মাঝে মধ্যে গল্পও করে আমাদের সঙ্গে। ভালোবাসা দিবস তো সবার জন্য, ফাল্গুন হোক আর বসন্ত সেটাও আসে নিজের নিয়ম অনুযায়ী তাই এগুলো আমাদের জন্যও আসে। আজকে সবার মন অনেক ভালো থাকবে, সবাই সেজে আসবে তাই আমরাও সুন্দর করে সেজে এসেছি। 

সকালে জাতীয় বসন্ত উদ্‌যাপন পরিষদের পরিবেশনা দেখতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে এসেছেন তানিয়া সুলতানা। তার মতে গত দুই বছর বসন্ত এসেছে ঠিকই তবুও কোথাও যেন একটা ফাঁকা শূন্যতা ছিল কোথাও ৷ 

তানিয়া বললেন, ফেব্রুয়ারি মানেই আমাদের কাছে অনেক কিছু, বসন্ত, বইমেলা, ভালোবাসা দিবস, মাতৃভাষা দিবস। সব মিলিয়ে অনেক আয়োজন থাকত বাঙালির। কিন্তু গত দুই বছর আমরা আসলে কিছুই পাচ্ছি না, আনন্দে তো কিছুটা ভাটা পরেছিলই। এবারে তাই এই আয়োজনের কথা জানতে পেরে সপরিবারে ছুটে এসেছি।


   আরও সংবাদ