ঢাকা, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩২, ১৯ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

মাছ বাজারে আলোর কারসাজিতে ঠকছে ক্রেতারা: ভোক্তা অধিকার


প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন


মাছ বাজারে আলোর কারসাজিতে ঠকছে ক্রেতারা: ভোক্তা অধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর অধিকাংশ মাছ বাজারে আলোর কারসাজিতে বিক্রি হচ্ছে পচা মাছ। এমন অভিযোগ পেয়ে বাজার বাজারে অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপ-সচিব) মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহারিয়ার বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা মাছের ওপরে বিভিন্ন রঙের বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করেছেন। সাধারণ ক্রেতাকে ধোঁকা দিতে সবুজ ও লাল বাতি জ্বালিয়ে পচা মাছ তাজা দেখিয়ে বিক্রি করছেন, এটা চরম ধোঁকাবাজি।

আজ সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর নিউমার্কেট ও শান্তিনগর মাছ বাজারে অভিযান শেষে গণমাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দুটি বাজারে চারটি মাছের দোকানকে অর্থদণ্ড করেন। 

এই-সচিব মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহারিয়ার বলেন, ব্যবসায়ীরা চিংড়ি মাছের ওপরে সবুজ, লাল, অতি উজ্জ্বল ও হলুদ বাতিসহ বিভিন্ন ধরনের বাতি ব্যবহার করেন। এ ছাড়া একজন মাছ ব্যবসায়ী প্রতিটা তাবালের পরে দুই থেকে তিনটি করে বাতি জ্বালিয়ে রাখেন। এখন থেকে একজন ব্যবসায়ী একটি করে সাদা বাতি ব্যবহার করতে পারবেন। না হলে, এদিকে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। অপর দিকে বিভিন্ন আলোর ঝলকানিতে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। 

তিনি বলেন, আজকে বাজার ঘুরে এই সব বাতি হাতেনাতে পেয়েছি। বাজার কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা সবাইকে নিয়ে বসে তিন দিনের মধ্যে এই সকল বাতি অপসারণ করবে ও ভবিষ্যতে যেন আর ব্যবহার না করে। বাজার সমিতিকেও সতর্ক করেছি। তারাও যেন তাদের মতো করে সতর্কতা করেন। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টিমগুলো নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে জানিয়ে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহারিয়ার বলেন, আজও ঢাকা শহরে আমাদের ছয়টি টিম কাজ করছে। তারা বিভিন্ন বাজারে বাজারে ঘুরে মাছের বিষয়টা দেখবেন। সব ব্যবসায়ীদের প্রতি একটাই অনুরোধ থাকবে, মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ব্যবসা করবেন না। মানুষ মাছ তাজা ভেবে বাসায় গিয়ে যেন প্রতারিত না হয়। 

নির্দেশনা না মানলে ভবিষ্যতে কি ব্যবস্থা নেবেন গণমাধ্যমের করা এক প্রশ্নের জবাবে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহারিয়ার বলেন, যেই ব্যবসায়ীর হোক না কেন ভোক্তা অধিকার আইনের কোনো ব্যত্যয় করা যাবে না। আপনারা দেখেছেন, মাছ বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তারা, তাদের পুঁজি কম। তাই তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা থেকে, কঠোর মনিটরিংয়ে বেশি মনযোগ দিচ্ছে ভোক্তা অধিদপ্তর। তবে আইনে এই অপরাধে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যায়। ভোক্তা অধিদপ্তর চায় সুযোগের মাধ্যমে তারা সংশোধন হোক। বারবার বলার পরেও যদি কেউ পরিবর্তন না হয়, তখন আইন অনুযায়ী অর্থদণ্ড করাসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হবে। এরপরেও যদি কেউ ঠিক না হয়। তখন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। সৎ ভাবে ব্যবসা করলে অবশ্যই লাভ থাকবে। 

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন বিভিন্ন বাজারে মুদি দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা ঝোলানো আছে। যা কয়েক বছর আগেও দেখা যেত না। ব্যবসায়ীদের মধ্যে পরিবর্তন হচ্ছে। এদিক থেকে ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানাই ও সরকারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 

আবদুর রাজ্জাক নামের এক মাছ ক্রেতা বলেন, শান্তিনগরের এই মাছ বাজার একটা নাম করা মাছের বাজার। তবে এখানে মাছ ব্যবসায়ীরা চার-পাঁচ ধরনের বাতি মাছের ওপরে জালিয়ে রাখেন। এতে মাছের প্রকৃত অবস্থা বোঝার উপায় থাকে না। এ ছাড়া যারা মাছ কাঁটে তারাও ওই ব্যবসায়ীদের সাফাই গায়। মাছ কাটার সময় তারা বলেন, মাছটা কত নিয়েছে, খুব লাভে মাছ কিনতে পেরেছেন। কিন্তু বাসায় নিয়ে যাওয়ার পরে ধোয়ার জন্য পানিতে দিলে বোঝা যায় মাছের প্রকৃত অবস্থা কি! 

শান্তিনগর বাজারের এক ফল ব্যবসায়ী বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের বিভিন্ন সময় অভিযানের করণে মাছ ব্যবসায়ীরা এখন বিভিন্ন ধরনের বাতি ব্যবহার করেন কম। তবে তারা তিন-চারটা সাদা বাতি ব্যবহার করে। আর তাতে লাল, নীল, হলুদ, সবুজসহ বিভিন্ন রঙের রঙিন এক প্রকার কাগজ ব্যবহার করেন। এতে করে ওই রঙিন বাতি ব্যবহার করার দরকার হয় না। এ ছাড়া ওটা খুব সহজে ছিঁড়ে ফেলাও যায়। আর অফিসাররাও এটা ঠিক বুঝতেও পারে না।


   আরও সংবাদ