প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : কাজের খোঁজে বাবার সঙ্গে ঢাকায় এসে ফলে ব্যবসা শুরু করে মনির। পরে তার সঙ্গে পরিচয় হয় স্থানীয় অপরাধ চক্রের সদস্যদের। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় তার অপরাধ জগতের হাতেখড়ি। শুরু করেন মাদকের ব্যবসা। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন মাদকের সাম্রাজ্য। যেখানে তার নিয়ন্ত্রণে ছিল রাজধানীর আট এলাকা। আর এই মাদকের টাকায় গ্রামের বাড়িতে নিজেই গড়ে তোলেন বাবার নামে মাজার। নাম দেন চাতক শাহ'র মাজার।
আজ শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার মধুবাজারের একটি ফ্ল্যাটে অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসার অন্যতম হোতা আব্দুল্লাহ মনির পিচ্চি মনির (৩৩) ও তার সহযোগী জুবায়ের হোসেন (৩৩) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-২। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড তাজা গুলি, ১৮ হাজার ৭৭০ পিস ইয়াবা, ছয় গ্রাম আইস ও নগদ ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মনিরের পরিবার জীবিকার সন্ধানে ১৯৯৫ সালে ঢাকায় চলে আসে এবং লালবাগ শহীদনগর এলাকায় বসবাস শুরু করে। ঢাকায় এসে মনিরের বাবা ফলের ব্যবসা শুরু করেন। মনির তাকে সহযোগিতা করত। এক সময় মনির এলাকার বখে যাওয়া ছেলেদের সঙ্গে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে মনির। ধীরে ধীরে সে এলাকার বখাটেদের নিয়ে লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় একটি অপরাধ চক্র গড়ে তোলে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় মনির ও তার এক বন্ধু পার্টনারশিপের মাদকের ব্যবসা শুরু করে। প্রথমে তারা স্থানীয় মাদক ডিলারদের কাছ থেকে অল্প অল্প করে মাদকদ্রব্য কিনে খুচরা মাদক সেবীদের কাছে বিক্রি করত। পরে ২০১৬ সালে কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে তারা মাদক নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এরপর থেকে টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে মনিরের কাছে নিয়মিত মাদকদ্রব্য ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সরবরাহ করত। মাঝে মধ্যে তারা ঢাকা থেকে কক্সবাজার গিয়ে নিজেরাই মাদকের চালান নিয়ে আসত।
তবে তারা অর্থ লেনদেন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে করত। শতকরা ২০ শতাংশ হারে অ্যাডভান্স পেমেন্টের মাধ্যমে ইয়াবা ঢাকায় চলে আসত। মাদকের ডেলিভারি ও লেনদেন গ্রেপ্তার মনিরের ভাড়া বাসাসহ সুবিধামতো জায়গায়। গ্রেপ্তার মনির ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটিয়া ছদ্মবেশে মাদকের গোপন কারবার করত।
রাজধানীতে মনিরের নিয়ন্ত্রিত এলাকা
মনির প্রতি মাসে কয়েকটি চালান টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসত। মনির মিরপুর-১৩, ইসলামবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, আজিমপুরসহ আরও কয়েকজন খুচরা মাদক কারবারিদের সরবরাহ করত। প্রত্যেক খুচরা কারবারির জন্য ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। কৌশলগত কারণে খুচরা কারবারিদের পারস্পরিক অপরিচিত রাখা হতো। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে হাতিরপুল এলাকার তার ২য় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া করা বাসা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়। সে এক একটি এলাকায় এক-দুই বছরের বেশি অবস্থান করত না।
মাদকের টাকায় বাবার নামে মাজার
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মনির নিজ বাড়ি শরীয়তপুরে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সে তার বাবার কৃতি সন্তান তা জনসাধারণকে জানানোর উদ্দেশ্যে এলাকায় মাদকের অবৈধ টাকা দিয়ে তার বাবার কবরে চাতক শাহ নামে একটি মাজার নির্মাণ করছে।
মনিরের অস্ত্র কারবার
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মনির ২০১৮ সাল থেকে অস্ত্র কারবার শুরু করে। সে ২০১৮ সালে অবৈধ পিস্তলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। এতে মনির সাত মাস কারাগারেও ছিল। পরে ২০২০ সালে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ফের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। এ সময় সে এক বছর কারাভোগ করে। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত তিনটি মামলা রয়েছে।
ইয়াবা-আইসের চালান আসছে বিমান দিয়ে
র্যাবের মুখপাত্র জানান, কক্সবাজার থেকে মনির বিভিন্ন উপায়ে ইয়াবা আনত। কখনো কক্সবাজার-টেকনাফের কারবারিরা নিজেরাই ঢাকায় এসে ইয়াবা দিয়ে যেত। তবে সর্বশেষ ইয়াবার চালান এসেছে বিমানে। সেই ইয়াবা আনা হয় কার্বন পেপারে পেঁচিয়ে। ২০০ পিস ইয়াবা একেকটি প্যাকিং করে কারবারিদের মাধ্যমে সো রাজধানীর আটটি জোনে সরবরাহ করত।
বিমানে কীভাবে আসছে ইয়াবা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুজনের এয়ার টিকিট পেয়েছি যারা মনিরের কাছে ইয়াবা ও ৫০ গ্রাম আইস পৌঁছে দিয়েছে। মনিরের বক্তব্যে উঠে এসেছে বিমানেই এসেছিল সেই চালান।