প্রকাশ: ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ২০:২৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : হাইকোর্ট বলেছেন, দুর্নীতি একটি মানসকি ব্যাধি, এর মূল উৎপাটন করতে হবে। দুদকের কাছে প্রত্যাশা, সাংবিধানিক পদধারী বা নন পদধারী যেই হোক তাদের বিচারের আওতায় এনে দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতির বিরুদ্ধে নির্দেশনার কারণেই দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে আমরা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য।
হাজী সেলিমের ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে প্রকাশিত রায়ে হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলেন। বিচারপতি বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সাক্ষরের পর বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬৬ পৃষ্টার এই রায় প্রকাশ করা হয়।
হাইকোর্ট বলেন, আমরা সচেতনভাবে পর্য বেক্ষণ করছি- দুদক এখন পর্যন্ত এই রকম হাজার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম নয়। কিন্তু এর জন্য চেষ্টা থাকতে হবে। তবে দুর্ভাগ্য যে, এই জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের উপর নির্ভর করে আছে।
আদালত বলেন, দুর্নীতিতে অনেক বিশেষ ব্যক্তিবর্গ আসক্ত হয়ে পড়েছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে দুদক, বিচার বিভাগ ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে সমন্বিতভাবে তাদের সতর্ক করে বার্তা দিতে হবে। যদিও এই কাজ কঠিন এবং ঝুকিপূর্ণ। একজন সৎ ব্যক্তি একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির খপ্পরে পরে যেতে পারে। তারপরও দুর্নীতিমুক্ত জাতি ও সমাজ গঠনে কাজ শুরু করতে হবে। রায়ে হাজী সেলিমকে ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৯ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি।
জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, বিচারিক আদালত রায়ের কপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পন করতে হবে। আর ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকায় হাজী সেলিম সংসদ সদস্য পদ হারাবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে জানতে চাইলে হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, আমরা আপিল বিভাগে আবেদন করবো। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার জাতীয় সংসদের স্পিকারের। এছাড়া একমাসের মধ্যেই আত্মসমর্পণ করে আপিল বিভাগে জামিন চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ১৩২ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করে দুদক। ওই মামলায় ২০০৮ সালে হাজী সেলিমকে দুদক আইনের দুটি ধারায় মোট ১৩ বছর কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত।
২০০৯ সালে হাজী সেলিম বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালে ওই সাজা বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষেত ২০১৫ সালে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় শুনানি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
নির্দেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের মামলাটি শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয় দুদক। শুনানিতে হাজী সেলিমের মামলার যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেন হাইকোর্ট। ওই নথি পাওয়ার পর গত বছরের ৩১ জানুয়ারি শুরু হয় পুনঃশুনানি। এরপর গত বছরের ৯ মার্চ রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে আংশিক আপিল মঞ্জুর করে ১০ বছরের ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট।