ঢাকা, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ চৈত্র ১৪৩২, ১৬ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

ঘটনা যেখানেই ঘটুক, মামলা নিতে থানাগুলোকে সতর্ক করল: ডিবি প্রধান


প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারী, ২০২২ ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন


ঘটনা যেখানেই ঘটুক, মামলা নিতে থানাগুলোকে সতর্ক করল: ডিবি প্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমরা দীর্ঘদিন ধরে আসামি গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করি। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে আসে তারা। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অপরাধরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পূর্বের অপরাধ জগতেই ফেরে বলে জানিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কে এম হাফিজ আক্তার।

গতকাল রোববার রাতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের মূলহোতাসহ ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

আজ সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, যখনই কোনো ডাকাত চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করি, দেখা যায় মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে তারা আবার জামিনে বের হয়ে একই পেশায় যুক্ত হয় তারা। তাদের গ্রেপ্তার করতে যত সময় লাগে, এরপরে আবার জামিন নিয়ে বের হয়ে যায়।

তিনি সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে সতর্ক করে বলেন, রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে দূরপাল্লার এক বাসে ওঠার পর ভয়ানক এক ডাকাতদলের কবলে পড়েন ওই ডাক্তার। বাসে ১২ ঘন্টা ব্যাপী ঢাকা মহানগর ও আশপাশ এলাকায় বাসে যাত্রী তুলে ডাকাতির ঘটনায় যারা মামলা না নিয়ে ঠিক করে নাই। পথিমধ্যে যেখানেই ঘটনা ঘটুক না কেন, ভুক্তভোগীর মামলা নিতে হবে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- নাঈমুর রহমান নাঈম, আবু জাফর বিপ্লব, সজিব মিয়া, জহুরুল ইসলাম, আলামিন, দিলিপ সোহেল, আলামিন ও শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া আজাদ। 

তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ৪টি চাপাতি, ৪টি ছুরি, ৫টি লোহার রড, চোখ বাঁধার কাজে ব্যবহৃত ৩টি গামছা, মোবাইল ১০টি, খেলনা পিস্তল ২টি ও নগদ ৯ হাজার ৮০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

হাফিজ আক্তার বলেন, চলতি মাসের গত ২০ জানুয়ারি দিবাগত রাতে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শফিকুল ইসলাম তার বন্ধুসহ উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আব্দুল্লাহপুর পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে টারাইলের উদ্দেশ্যে আর কে আর পরিবহন নামক বাসে উঠেন। পরে তার বন্ধুসহ তাকে বাসে উঠা মাত্রই ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই হাত ও চোখ বেঁধে ফেলে। 

এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা নগদ এক লাখ ১৫ হাজার টাকা, বিকাশে থাকা পাচ হাজার টাকা ও ব্যাগে থাকা ২টি ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে আরও এক লাখ ৫০ হাজার টাকা সহ মোবাইল ফোন ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। 

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় এই ডাকাত দলটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আর.কে.আর পরিবহনের একটি বাসকে ভাড়ার কথা বলে সাভারের গেন্ডা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে ডাকাতরা প্রথমে বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসটিয় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেরা। পরে বাসটি নিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকে। আর টার্গেট করে যাত্রী উঠা পরবর্তীতে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে, হাত-মুখ বেঁধে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদের নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়। 

এই চক্রটি ঢাকা জেলার সাভার, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে একইভাবে ডাকাতি করে। ডাকাতদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া বাস ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে ডাকাতরা নিজেদের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।

ডাকাতির ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা কিভাবে আইনি সহায়তা নিতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, ঘটনায় মামলা নেওয়ার গরিমশি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। যে কোন ঘটনা ঘটলেই অভিযোগ করতে নিতে হবে। না হলে আমরা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে পারব না। বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে। 

এরপরই গ্রেপ্তারদের একাধিক ডাকাতির ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এছাড়া ডাক্তার সাহেব গতকাল উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করে গেছেন। উনি যেহেতু উত্তরা থেকে উঠেছেন সেজন্য উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি করেছেন। মামলা না হলে আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আর যেসব থানা প্রাথমিকভাবে মামলা নিতে চায়নি তারা হয়তো চিন্তা করেছে বাসটি কোথায় থেকে আসছে কিভাবে গ্রেপ্তার করবে এসব বিষয়। তবে এটা ঠিক কাজ হয়নি। এ বিষয়ে ওইসব থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ‌

ডাকাতির মামলা বেশি হয়ে গেলে ডিএমপির পক্ষ থেকে ওই সংশ্লিষ্ট থানার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন কোনো নির্দেশনা আছে কিনা আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন কোনো চাপ ডিএমপির পক্ষ থেকে নেই। যে কোন ঘটনার মামলা থানাকে অবশ্যই নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ডাকাতির মামলা নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে অনেক থানা মামলা নিতে অনিহা প্রকাশ করে। কিন্তু এই বিষয়ে শক্তভাবে বলা হয়েছে মামলা নিতে, না হলে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাবে। আরও বল আছে সম্পত্তি বিষয়ক যে কোন অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ করতে হবে।

যেসব থানা মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাকাতি মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিহার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। এই বিষয়গুলো আমরা দেখছি। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এসব ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। থানাকে এমন কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে ডাকাতি মামলা নেওয়া যাবে না। শক্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে কোনো ঘটনায় মামলা নিতে হবে। ‌এ সব বিষয়ে গতকাল ডিএমপিতে ক্রাইম কনফারেন্সে আলোচনা হয়েছে। আর সেখান থেকে এসব বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা অভাব আছে কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এখানে আমরা কারো অবহেলার বিষয়টি বলতে চাচ্ছি না, আমরা যদি ঠিকভাবে এগুলো নজরদারিতে রাখি, তাহলে এসব ঘটনা কমে যাবে। আর অপরাধ প্রবণ এলাকায় নজরদারি বাড়াচ্ছি।

এ ছাড়া গতকাল রাতে ডিবির স্টিকার লাগানো মাইক্রোবাস নিয়ে ডাকাতি করার সময় রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় আরেকটি আন্তঃজেলা ডাকাতদলের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির তেজগাঁও বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মোজাম্মেল হোসেন আপেল, জাহাঙ্গীর আলম, জমির খান, মজিবর রহমান মজিদ, মাসুম গাজী, শফিকুল খরাদি, কুদ্দুস আলী ও কাউছার মিয়া। তাদের কাছ থেকে ডিবির নকল জ্যাকেট, একটি দুনালা বন্দুক, একটি ওয়্যারলেস সেট, একটি হ্যান্ডকাফ, ছুরি ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।

এই ডাকাত দলটি ঢাকা মহানগর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহ আশেপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে আসছে বলে জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।

এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ) হারুন অর রশিদ, ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন, তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম, ও শাহাদত হোসেন সুমা।


   আরও সংবাদ