প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারী, ২০২২ ০৬:০২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাণিসম্পদ খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাণিজাত পণ্যের বহুমুখীকরণে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরণে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদিত সামগ্রী যাতে বিদেশে রপ্তানি করা যায় সেজন্য আমরা বিশ্বের উল্লেখযোগ্য দেশসমূহে বাজার সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের এগ্রো বিজনেস প্ল্যানিং, টেকনোলজিস অ্যান্ড মার্কেটিং অ্যাডভাইস অ্যান্ড ইমপ্লিমেনটেশন সাপোর্ট বিষয়ক ইনসেপশন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা জানান।
জার্মানীভিত্তক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এএফসি এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফিন্যান্স কনসালটেন্টস এবং তাদের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সার্ভিসেস অ্যান্ড সলিউশনস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও উল্লিখিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আব্দুর রহিম। কর্মশালায় প্রকল্প কার্যক্রম উপস্থাপন করেন প্রকল্পের চীফ টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রব্বানী। ইনসেপশন রিপোর্ট উপস্থাপন করেন কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মানব চক্রবর্তী। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার ও এস এম ফেরদৌস আলম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রাণিসম্পদ খাতের বিজ্ঞানী-গবেষক, উদ্যোক্তা ও খামারিগণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, "করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বেশ কয়েকটি দেশ আমাদের দেশ থেকে মাছ-মাংস আমদানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। প্রাণিজাত খাদ্য উৎপাদনের সাথে যারা জড়িত আছেন তাদের নিশ্চিত করতে চাই যে, বিশ্ববাজারে আপনাদের উৎপাদিত সামগ্রী ছড়িয়ে দিতে সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে"।
মন্ত্রী আরো বলেন, "করোনাকালে খামারিদের উৎপাদিত সামগ্রী যাতে মুখ থুবড়ে না পড়ে সেজন্য দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় ব্যবস্থার মাধ্যমে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মাছের বা প্রাণীর খাবার বিমানবন্দর, নদীবন্দর বা সমুদ্রবন্দরে যাতে আটকে না থাকে সেজন্য আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে মৎস্য ও প্রাণিজাত পণ্য সামগ্রীর পরিবহন স্বাভাবিক রেখেছি। লক্ষ্য ছিল উৎপাদনকারীরা যাতে বিপদে না পড়ে এবং উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি করতে পারে"।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, "প্রাণিসম্পদ খাতে শুধু উৎপাদন বৃদ্ধিই নয় বরং উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। বহুমুখীকরণ করতে না পারলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। দুধ ও মাংস থেকে বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী উপকরণ তৈরির সুযোগ রয়েছে। এ খাতে সম্পৃক্তরা এর বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে হবে, মাংস জাতীয় পণ্য তৈরির দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে। মাংস থেকে চিপস তৈরি হতে পারে, বিস্কুট তৈরি হতে পারে। শুধু মাংস বিক্রির মাধ্যমে এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এজন্য বহুমুখীকরণ ও ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে"।
তিনি বলেন, "দুধ উৎপাদন ও বিপণন সমস্যা সমাধানে প্রকল্পের আওতায় সরকার কুলিং সেন্টার করে দিচ্ছে, খামারিদের মিল্ক সেপারেটর মেশিন সরবরাহ করছে, উৎপাদিত দুধ সরবরাহের জন্য খামারিদের গ্রোথ সেন্টারের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে প্রাণিসম্পদ খাতে সম্পৃক্তদের সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকার ব্যাপক আকারে পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন ও বিস্তারে শুধু কাজ করলেই হবেনা, এর গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতে গুণগত মানসম্পন্ন সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করতে হবে। উৎপাদিত মাংস যেন মানবদেহের জন্য উপযোগী হয়, মাংস থেকে অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করলে সেটা যেন মানসম্পন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত ও আন্তর্জাতিক মানের হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে যে খাবার ব্যবহৃত হবে সেটাও মানসম্পন্ন হতে হবে, মাননিয়ন্ত্রণ গবেষণাগারে পরীক্ষাকৃত হতে হবে"।
বিদেশ থেকে কেন সব সময় মাছের খাদ্য ও পশুখাদ্য আমদানি করতে হবে, সংশ্লিষ্টদের এ প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, "মাছের ও পশুর খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে কর অব্যাহতিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ছাড় দিচ্ছে সরকার। দেশে মাছ ও প্রাণী খাদ্য তৈরির খাত তৈরি করতে হবে"।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, "বিদেশ থেকে যাতে মাংস আমদানি না হয় সেক্ষেত্রে আমরা কৌশলগত নীতি নির্ধারণ করেছি। কারণ আমাদের দেশে পর্যাপ্ত গবাদিপশু রয়েছে। দেশেই পর্যাপ্ত মাংস উৎপাদন হচ্ছে। কেন বিদেশ থেকে আমরা মাংস আনবো? পর্যায়ক্রমে সেগুলো বন্ধের দিকে আমরা যাচ্ছি। সরকার এ ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছে। তবে সব সময় শুধু সরকারের উপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। সরকার বেসরকারি খাতকে উদ্বুদ্ধ করছে, উৎসাহিত করছে, সহযোগিতা দিচ্ছে। এ খাত সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা আমরা চাই"।