প্রকাশ: ২২ জানুয়ারী, ২০২২ ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রোগী দেখতে এসে লাশ হয়ে ফিরলেন। এই শোক আমরা কীভাবে ভুলব? সড়কে মৃত্যুর এই মিছিল বন্ধ হোক। এখন সড়কে যেখানেই কোন দুর্ঘটনা ঘটবে, কেউ মারা যাবে এই স্মৃতি চোখের সামনে ভাসবে। আজকের আমার, কালকে আরেকজনের এমন মৃত্যু আর দেখতে চাই না। সরকার যেন এই হত্যাকারীদের প্রকাশ্যে এনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে। যেন আর একটাও প্রাণ সড়কে না হারায়। কথা গুলো বলছিলেন মহাখালী ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি সাহেদা বেগমের ছেলে তানভীর ইসলাম।
গতকাল শুক্রবার সকালে সাহেদা বেগমকে দেখতে ঢাকায় এসেছিলেন তার স্বামী আব্দুর রহমান, মেয়ে শারমিন আক্তার, জামাতা সিরাজুল ইসলাম ও নাতনি বৃষ্টি আক্তার। বরিশালের উজিরপুর থেকে লঞ্চে করে সকালে সদরঘাটে আসেন তারা। সদরঘাট থেকে সাহেদা বেগমের বড় ছেলে তানভীরের মাতুয়াইলের বাসায় সিএনজিতে করে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে মাতুয়াইলে সেন্টমার্টিন পরিবহনের একটি বাস তাদের সিএনজিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ৬ বছরের শিশু বৃষ্টি আক্তারের অবস্থা জানিয়ে তানভীর ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির অবস্থা আগের থেকে একটু ভালো। মাথায় আঘাত পেয়েছে। বারবার মায়ের কাছে যেতে চাচ্ছে। ওকে বলছি তুমি একটু সুস্থ হলেই মায়ের কাছে নিয়ে যাবো। হাসপাতালের ভর্তি মা সাহেদা বেগম সম্পর্কে তিনি বলেন, মা এখনো মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন। তাঁকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তিনি এই ঘটনা শুনলে হাসপাতালেই মারা যাবেন। তাকেও এখনই হারাতে চাই না।
আজ শনিবার সকালে মানিকগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাসের চালক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনার (৪০) ও হেলপার কোরবান আলীকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০। পরে সন্ধ্যায় রাজধানীর ধলপুরে র্যাব-১০ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-১০ এর উপ-অধিনায়ক মেজর শাহরিয়ার জিয়াউর রহমান।
মেজর শাহরিয়ার জিয়াউর রহমান বলেন, গতকাল শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ৭ টায় যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল টোটাল সিএনজি ফিলিং স্টেশনের বিপরীত পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রামের দিক থেকে আসা সেন্টমার্টিন ট্রাভেলস এর একটি বাস দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে যাত্রীবাহী একটি সিএনজিকে সজোরে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেওয়ার পর গাড়ির ড্রাইভার ও হেলপার ঘটনাস্থল হতে গাড়ি চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তিনি জানান, দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই সিএনজিতে থাকা একই পরিবারের মো. আবদুর রহমান ব্যাপারী (৬০), মোছা শারমিন আক্তার (৩৫) ও সিরাজুল ইসলাম কুদ্দুস (৪০) ৩ জনের মৃত্যু হয়। ‘এ ছাড়া শারমিন ও সিরাজুল ইসলামের কন্যা শাকিরা বৃষ্টি আক্তার (৬) ও সিএনজির ড্রাইভার গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা আহত শিশু ও ড্রাইভারকে মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
শাহরিয়ার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় নিহত আব্দুর রহমানের ছেলে বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর র্যাব-১০ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করি। পরে আজ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।