প্রকাশ: ২১ জানুয়ারী, ২০২২ ০৬:০১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেছেন, সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখনই সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয় নিয়ে আন্দোলন করে, তখনই সরকারের নিয়োগ করা ভিসিরা সেটা বনাঞ্চাল করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। প্রকৃত পক্ষে তারা ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে কখনো কাজ করে না। সমস্যা নিয়ে যখন তাদের কাছে যাওয়া হয়, তখন তারা এমন আচরণ করেন যেন, মনে হয় তারা সরকার দলীয় থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী। তারা সরকারের এজেন্ডায় বাস্তবায়ন করতেই আসছে।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি ও শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে জড়িতদের বিচারের দাবিতে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি থেকে নাগরিক ছাত্র ঐক্য তিন দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো-অতিসত্বর উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ; শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচার করতে হবে ও সাধারণ ছাত্রদের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে, শাবিপ্রবিতে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
তরিকুল ইসলাম বলেন, করোনা সমস্যা দেখিয়ে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মৃতপ্রায় শিক্ষাব্যবস্থাকে শ্মশানে সৎকার করার অপচেষ্টার প্রথম ধাপের অংশই হচ্ছে শাবিপ্রবিতে হামলা। আপনারা দেখেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মিজানুর রহমান যুবলীগের সভাপতি হতে চেয়েছেন। এ ছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের যদি এই মুহূর্তে কোনো শ্রমিক লীগ ধরনের সংগঠনগুলোতে নেতা হওয়ার জন্য আবেদন করেন। তাহলে সরকার তাকে নিয়ে নিবে।
নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিটি যৌক্তিক আন্দোলনে নাগরিক ছাত্র ঐক্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে। শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে উপাচার্যের পদত্যাগ, শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে। এ ছাড়া শাবিপ্রবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হলে সেই দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। এ সময় সবকিছু খোলা রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
আন্দোলনকারীরা বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলের খাবারের মান উন্নয়নের জন্য কথা বলেছে। থাকতে তাদের সমস্যা হয় বলে, আবাসন সমস্যা নিয়ে কথা বলেছে। এটা সমাধান করাই যেত। কিন্তু সেটা না করে প্রভোস্ট বলেছে সেখানে কি কেউ মারা গেছে যে, আমাকে এত বার বিরক্ত করছো। প্রভোস্ট তার দায়িত্বকে বিরক্ত মনে করছে কতটা নির্লজ্জ হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা বলতে পারে। আবার পরে বলে যদি কেউ মারা যায় বলিও আসব।
তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি তার নজর নেই। এসব বিষয় নিয়ে যখন শিক্ষার্থীরা হল ছাড়ার হুমকি দিল, তখন বলে যাও, হল ছেড়ে দাও। এর একপর্যায়ে যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে, তখন তিন বাহিনী-পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের সমন্বয়ে তাদের ওপর হামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার পরেও উপাচার্যকে প্রত্যাহার না করা ও বিষয়টি ক্ষতিয়ে না দেখায় বোঝা যাচ্ছে এখানে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার উপাচার্যকে অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা সরকারের সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অংশ। শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের খড়্গ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, আমরা শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। আমরা যেকোনো সময় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।
এতে উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক আব্দুল আলিফ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাসেল আহম্মেদ, শেরিফ ফারুকি, খালিদ হোসেন শান্ত, সাজ্জাদ খান, খায়রুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দগণ।