ঢাকা, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ চৈত্র ১৪৩২, ১৬ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

এটিএম কার্ড ক্লোনিং স্কেমিং চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার


প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারী, ২০২২ ১০:০০ পূর্বাহ্ন


এটিএম কার্ড ক্লোনিং স্কেমিং চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, কানাডা ও স্পেনসহ প্রায় ৪০টি দেশের নাগরিকের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে স্কেমিংয়ের মাধ্যমে সেই সব দেশের বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করেন। আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড ক্লোনিং স্কেমিং চক্রের একজন সদস্য। বিভিন্ন দেশের বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের পর তিনি বাংলাদেশে এসে প্রায় শতাধিকবার ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন বুথে গিয়ে বিভিন্ন দেশের একাধিক ক্লোন কার্ড ব্যবহার করে ব্যর্থ হয়। 

ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ভারতীয় পুলিশের হেফাজত থেকে পলাতক আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড ক্লোনিং স্কেমিং চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান-১ এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- তুরস্কের নাগরিক হাকান জানবুরকান (৫৫) ও বাংলাদেশি নাগরিক মফিউল ইসলাম। এ সময় সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি বিভিন্ন মডেলের ফোন, একটি ল্যাপটপ, ১৫টি ক্লোন কার্ডসহ মোট ১৭টি ব্যাংক কার্ড জব্দ করা হয়।

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, তুরস্কের নাগরিক হাকান জানবুরকান গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন এবং ২ জানুয়ারি থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন বুথে গিয়ে কার্ড ক্লোনিং স্কেমিংয়ের মাধ্যমে শতাধিকবার টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হয়। ইস্টর্ণ ব্যাংক লি. এন্টি ফেমিং টেকনোলজি ব্যাবহার করায় অ্যালার্ম সিস্টেমের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত হয় ও হ্যাকারদের হাত থেকে স্কেমিং রোধ করতে সক্ষম হয়। এই নাগরিক একাধিকবার একাধিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে এসেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিয়োমিত বাংলাদেশে আসে। বাংলাদশে এসে তার সহযোগি গ্রেপ্তার মফিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এই মফিউল ইসলামের বড় ভাইসহ আরো চারজন একই অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে ভারতে জেল হাজতে রয়েছে।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, তুরস্কের নাগরিক হাকান জানবুরকান গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন এবং রাজধানীর পল্টন এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। ২ জানুয়ারি থেকে ৪ জানুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন বুথে গিয়ে । অস্ট্রেলিয়া, নিউজল্যাভ, ইউএসএ, ইন্ডিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, অস্ট্রিয়া, জার্মানী, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বলিভিয়া, স্পেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়েসহ প্রায় ৪০টি দেশের নাগরিকের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে স্কেমিংয়ের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের জন্য চেষ্টা করেন।

তুরস্কের এই নাগরিকের বরাত দিয়ে সিটিটিসি প্রধা জানান, হাকান জানবুরকান ২০১৯ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের পাল্টন বাজার পুলিশ স্টেশনের এটিএম স্কোমিং মামলার ২ বাংলাদেশিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ।  এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা ভারতের বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে কার্ড ক্লোনিং করে প্রায় ১০ লাখ রুপি আত্মসাৎ করেন। ভারতে প্রায় ২০ মাস জেলে থাকার সময় আগরতলার গোবিন্দ বল্লভ প্যান্ট হাসপাতালে পুলিশ হেফাজত থেকে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি সুকৌশলে পালিয়ে যান। 

পরে এক ভারতীয় ব্যক্তির সহায়তায় দুই লাখ রুপির বিনিময়ে সিকিম হয়ে নেপালে পৌঁছান। সেখান থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে নিজ দেশে ফিরে যান এবং নতুন পাসপোর্ট তৈরি করেন। এই চক্রে একাধিক বাংলাদেশি, তুরস্ক, বুলগেরিয়া, মেক্সিকো, ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। এর আগে চারবার বাংলাদেশে এসেছিল হাকান। চার বারে কি পরিমাণ টাকা নিয়ে গেছে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা কোনো ব্যাংক থেকে অভিযোগ পাইনি। তার বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। কি পরিমাণ টাকা নিয়েছে জানতে কাজ চলছে।

তুরস্কের নাগরিকের পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, হাকানের উল্লেখ করার মতো কোনো পেশা ছিল না। সে আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপের সদস্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হ্যাকিং করে আসছিল সে। তার সঙ্গে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। এই কার্ড ক্লোনিং অপরাধে কারা কারা জড়িত এসব বিষয় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে বলেও জানান আসাদুজ্জামান।


   আরও সংবাদ