প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারী, ২০২২ ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: মধ্যবিত্ত ও অভাবী মানুষ দেখেই ঋণ দেয় চক্রটি। তারাই সাধারণ মানুষকে উৎসাহ দেন ঋণ নিতে। তবে কেউ এই পাতা ফাঁদে পা দিতে আগ্রহী হয়ে উঠলেই ঋণগ্রহীতাকে কিছু নিয়মকানুন মেনেই আসতে হয়। এ পর্যন্ত ৪০ থেকে ৫০ জনকে এইভাবে নিঃস্ব করেছে তারা। তবে র্যাব বলছে, এই চক্রের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে টোপ গিললেই সব হারাতে হয় ঋণগ্রহীতার।
রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় বিভিন্ন নিরীহ মানুষ জনকে লোভনীয় কথার ফাঁদে ফেলে টাকা ধার নেওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে উচ্চ হারে সুদে টাকা প্রদান ও গ্রহণ করে আসছে বলে অভিযোগ পায় র্যাব। পরে গতকাল রাতে সবুজবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের রানু বেগম (৪৪) ও সাহিদা আক্তার (৩৪) নামের দুই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় র্যাব-৩ এর মিডিয়া অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফারজানা হক এ তথ্য জানান। তিনি জানান, এ সময় তাদের কাছ থেকে ঋণগ্রহীতাদের স্বাক্ষরিত বিভিন্ন ব্যাংকের ৩০টি ব্লাংক চেক, ঋণগ্রহীতাদের স্বাক্ষরিত ৩৪টি ১০০ টাকার ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প, ৩৬ পাতা বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই,৭টি টাকা জমা বই,২টি গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তোলার পকেট নোট বুক ও ৬টি এনআইডি কার্ডের ফটোকপি উদ্ধার কার হয়।
তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তাদের কাছে ক্ষুদ্র ঋণ আদান-প্রদানের কোন লাইসেন্স নেই। তারপরেও অবৈধভাবে ঋণ প্রদানের নামে সর্বশান্ত করছে সাধারণ মানুষকে। প্রতিদিন ৪০ হাজার টাকা সুদের চাঁদা উঠত তাদের। গত ৫ বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এ ছাড়া মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করেছে অনেককে।
তাদের ঋণ দেওয়ার পদ্ধতি-এক লাখ টাকা সুদে লোন নিতে চাইলে, জামানত হিসেবে ঋণগ্রহীতার স্বাক্ষরিত দুইটি ব্ল্যাংক ব্যাংক চেক ও ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প নেওয়া হয়। এ ছাড়াও ওই এক লাখ টাকা থেকে জামানত হিসেবে ১৫ হাজার ও অগ্রিম ১০ দিনের কিস্তি বাবদ ১০ হাজার টাকাসহ মোট ২৫ হাজার টাকা কেটে রেখে ৭৫ হাজার টাকা ঋণগ্রহীতাকে দেওয়া হয়। এর পরে শুরু হয় ঋণের সুদ আদায় যত দিন ঋণগ্রহীতা এককালীন এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারবে, তত দিন ঋণগ্রহীতাকে দৈনিক এক হাজার টাকা লাভ দিতে হবে। এ ছাড়া প্রতিদিনের এক হাজার টাকা লাভ দিতে না পারলে, পরের দিন ১৩০০ টাকা দিতে হবে। তারপরেও বকেয়া কিস্তি ১০ হাজার টাকা হলে সপ্তাহে আরও অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা লাভ দিতে হয়।
এএসপি ফারজানা হক জানান, এর মধ্যে কোনো ঋণগ্রহীতা আসল টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, ঋণগ্রহীতার স্বাক্ষরিত ব্ল্যাংক চেকে ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে চেক ডিজঅনার করে মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে। এভাবে যদি টাকা আদায় না হয়, তবে ঋণগ্রহীতার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু হয়। এক লাখ টাকা ধার নিয়ে দুই বছরে ১৪ লাখ টাকা লাভ দিয়েছে। পরে ৩৩ লাখ টাকার চেক ডিজঅনার মামলা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগী। সেই মামলা বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন।