প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারী, ২০২২ ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ছোট থেকেই থাকেন ঢাকায় চাচার বাসায়। আদর-ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। পড়া-লেখা করেছেন বাঙলা করেছে। মাস্টার শেষ করে অপেক্ষা করছেন ইংল্যান্ডে যাওয়ার। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে চলে যাওয়ার কথা ছিল তার। এ কথা বলতেই কান্নাই ভেঙে পড়েন নিহতের চাচা সফিউদ্দিন আহমেদ। আমার জীবন দিলে হলেও আমি নূরুল আমিনকে বাঁচাতে চাইছি। কিন্তু ওরা মেরে ফেলে টাকা জন্য ফোন করেছে।
তিনি বলেন, হত্যাকারী আরিফুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় ছিল। ওই নূরুল আমিনকে ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে। পরের দিন দুপুর একটার দিকে ফোন করে এক কোটি টাকা দাবি করলে, আমি নূরুল আমিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বলে ও ঘুমিয়ে আছে। এ ছাড়া প্রশাসনের কাছে যেতে নিষেধ করে, বিকেল ৫টার মধ্যে টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে বিকেলে ফোন দিয়ে বলে পুলিশ-র্যাবের কাছে গেছেন, এই বলে হুমকি-ধমকি দিয়ে ফোন কেটে দেয়।
সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যৌথ পরিবার। ঢাকায় আমার গ্লাসের দোকান আছে। পরিবারের ছোট ছেলে আমি (সফিউদ্দিন আহমেদ)। নিহত নূরুল আমিন মেজো ভাইয়ের তিন ছেলের মধ্যে মেজো ছিল। গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ শ্রনগরে। নিহত নূরুল আমিন মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে, আইটির ওপরে ডিপ্লোমা করে ইংল্যান্ডে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে তার চলে যাওয়ার কথাও ছিল। তবে সেটা আর হতে দিল না ওই ঘাতকেরা।
রাজধানীর দারুস সালাম, মিরপুর মডেল ও শাহআলী থানা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে ডিবি। রোববার সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম সাইফ। এই ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলো-আরিফুল ইসলাম (৩০), ইমরান হোসেন (২৫) ও ইয়ামিন মোল্লা (২৫)।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম সাইফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, লেখা-পড়া শেষ করে অবসার সময় চাচা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসতেন। তবে বেশি দিন হয়নি। এর মধ্যেই দোকানে কেনা-কাটার জন্য আসা আরিফুল ইসলামের খারাপ নজর পরে তারা ওপরে।
সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় গ্রেপ্তার আসামিরা ভুক্তভোগীর পূর্ব পরিচিত ছিল। পরে একদিন দারুসসালাম থানাধীন জহুরাবাদস্থ আসামি ইমরানের ভাড়া বাসায় সুকৌশলে ডেকে এনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে জহুরাবাদস্থ বেড়িবাঁধের ঢালে বস্তাবন্দী করে লাশ ফেলে দেয় তারা। পরে তারা ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল থেকে তার চাচাকে ফোন করে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসামি আরিফুল ইসলামের ধারণা ছিল নুরুল আমিনকে অপহরণ করতে পারলে বেশ টাকা পাওয়া যাবে। আর এতে টাকা দিতেও প্রস্তুত ছিলেন নিহতের চাচা। তবে কৌশলে বাসায় ডেকে নিয়েই হত্যা করে ভিকটিমকে।
চলতি মাসের গত ২ জানুয়ারি রাত্র সাড়ে ১১টার দিকে দারুসসালাম থানা এলাকা থেকে নুরুল আমিন (২৮) নিখোঁজ হয়। পরে ৪ জানুয়ারি দারুসসালাম থানাধীন জহুরাবাদস্থ বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে ভুক্তভোগীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে ডিবি।