প্রকাশ: ৯ জানুয়ারী, ২০২২ ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: গাড়ির দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ভাড়া মালিককে পরিশোধ করার জন্য এবং অধিক লাভের উদ্দেশ্যে ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতামূলক বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালাতো রাকিব শরিফ। অধিক গতি থাকার কারণে ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রাকিব পথচারীদের চাপা দেয়।
রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারের মুখে বাসের ধাক্কায় ২ জন পথচারীর নিহতের ঘটনায় সেই বাসের চালক রাকিব শরীফকে (২৫) গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। পরে আজ রোববার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে কাওরানবাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, শনিবার ৮ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরীর হানিফ ফ্লাইওভারে সকাল সাড়ে ৯টায় মেঘলা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। এতেই শেখ ফরিদ (২৮) ও বাদশা মিয়াকে (৩২) গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনা পর চালক বাসটি ফেলে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা সড়ক ও পরিবহন আইনে ওয়ারী থানায় একটি মামলা করেন নিহতেদের এক স্বজন। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে মেঘলা পরিবহনের ঘাতক বাসটির চালক রাকিব শরীফকে গ্রেপ্তার করা হয়।
.jpeg)
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এ মুখপাত্র আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার রাকিব সড়ক দুর্ঘটনার দায় স্বীকার করে র্যাবকে জানিয়েছে, রাকিব ৭ থেকে ৮ বছর ধরে মেঘলা পরিবহনে বাসের হেলপারি করে আসছে। বাসের হেলপারি করার পাশাপাশি সে ড্রাইভিং এর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে বাসের হেলপারি ছেড়ে দিয়ে নিজে গাড়ী চালানোর জন্য মেঘলা পরিবহনের বিভিন্ন মালিকদের ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু গ্রেপ্তার রাকিব শরীফের কোনও বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে কোন মালিক তাকে গাড়ী চালানোর অনুমতি দেয়নি।
পরবর্তীতে সে বিভিন্ন তদবিরের মাধ্যমে মেঘলা পরিবহনের বিভিন্ন মালিকদের গাড়ী সাময়িকভাবে চালানো শুরু করে। অতঃপর ২০১৯ সালে সে হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) প্রাপ্ত হয়। উক্ত হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) দিয়েই সে ভারী মোটরযান চালানো শুরু করে। কিন্তু তার ভারী মোটরযান চালানোর মত কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) ছিল না।
রাকিব জানায়, গত ১৫ দিন পূর্বে বাসটির মালিক সবুর মিয়ার (৫০) থেকে দৈনিক ২২৫০ টাকায় বাসটি ভাড়ায় চালানো শুরু করেন রকিব। যথারীতি গতকাল বাসটি মিয়ে ভূলতা গাউছিয়া থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। আনুমানিক সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তান সংযোগ সড়কে নামার সময় বাসটির অধিক গতি থাকার কারণে এবং ব্রেক কাজ না করায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার বাম পাশে আইলেনের সাথে ঘেষে নামতে থাকে। এই সময় ফ্লাইওভারে অন্য একটি বাস থেকে যাত্রীরা নামছিল। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনার স্থল থেকে ২ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
বেপরোয়া গতি ও পরিবহন নৈরাজ্য থামছে না। এর সমাধান কি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, আমাদের সবার চাওয়া নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। কিছু দিন আগে আমাদের ছাত্ররা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেছে। সড়কে দূঘটনা কারোই কাম্য নয়। সম্প্রতি আমরা দেখেছি সড়কে বেশ কিছু দূর্ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আমরা কাজ করতে গিয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর বিষয়গুলো পেয়েছি। অনেকের গাড়িতে আমরা দেখিছি ফিটনেসের সমস্যা ছিলো। আমরা একটি বিষয় বলতে চাই অপরাধ করে কেউ পার পাবেন না।
র্যাব মনে করে সড়ক খাতের যত মালিক আছেন ও চালক আছেন। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বলবো না । সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সড়ক দূর্ঘটনা রোধে কাজ করতে হবে।
উত্তরে তিনি আর বলেন দ্রুত গতি ও প্রতিযোগিতার বিষয়েখন্দকার মঈন বলেন, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই দূর্ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনার পরে চালক পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার চালক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চালক জানিয়েছে, প্রতিদিন গাড়ির জমা হিসেবে ২২৫০ টাকা গাড়ির মালিককে দিতে হয়। এরপর তো রাস্তার খরচ রয়েছে। তারপর নিজের বেতন, সহকারীর বেতন। সব কিছু মিলিয়ে দ্রুত গতিতে আয়ের একটি প্রবণতা ছিল। পাশাপাশি অনেক সময় গাড়ির সমস্যার কথা বললে মালিকরা গুরুত্বদেন না। চালকরা বললেও মালিকরা গাড়ির কাজ করান না। এছাড়া চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের বিষয়ে মালিকদের আরো গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ঘটনা ঘটার পরে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু ঘটনার আগে মাঠে নামলে দূর্ঘটনা এড়ানো যেত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাইসেন্সের বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব বিআরটিএ, গাড়ির কাগজ ও ফিটনেস পরীক্ষা করে পুলিশ। র্যাব ও বিভিন্ন সময়ে কাজ করছি। তারপরও আমি বলবো আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।