প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : মানবচাপার চক্রটির টার্গেটে বিউটি পার্লারে কাজ জানা ও নার্সিং পেশায় নিয়োজিত মধ্য বয়সী নারীরা। বিদেশে সুপার শপে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের পাচার করত। পাচার হওয়াদের ইরাক ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে জিম্মি করে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন। এসব দেশে তাদের একাধিক সেফহাউজ রয়েছে বলে জানা র্যাব।
গত শনিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচার চক্রের মূলহোতা লিটন মিয়া নিজের বউসহ চল্লিশজন নারীকে পাচার করেছে। আর তার সহযোগী হিসাবে কাজ করত আজাদ। তারা দুজন সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য বলে জানা গেছে। তাদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক নারী পাচারকারী চক্রের যোগাযোগ আছে।
আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার আজাদ দেশেই সিন্ডিকেটটির প্রতারণার বিষয়টি দেখ ভাল করত। দেশে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এসব নারী-পুরুষকে পাচার করা হয়েছে। তিনি পাসপোর্ট প্রস্তুত, টাকা নেয়া, টিকিট কেটে দেয়া এসব বিষয় সহযোগীতা করত।
র্যাবের এই মুখপাত্র জানান, গতকাল সকালে রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে র্যাবের পৃথক অভিযানে আটক করা হয়েছে লিটন মিয়া ও তার সহযোগী আজাদকে। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট করা, বিয়ার, দেশি-বিদেশি জাল টাকা, পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সিল উদ্ধার করা হয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়ার পর সুযোগ বুঝে নারীদের বিক্রি করে দেয়া হতো। চক্রে দশজন সদস্যের মধ্যে সাতজন ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে আর বাকিরা দেশে এই কাজ করছিলেন। তিন থেকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে নারীদের চাকরির আশ্বাসে মধ্যপাচ্যে নিয়ে যাওয়া হতো। মানবপাচারের প্রথম ধাপে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই এরপর ভিজিট ভিসার মাধ্যমে ইরাকে নিয়ে যেত। এ পর্যন্ত চক্রটি ৩০ থেকে ৪০ জন নারীকে পাচার করেছে বলে তথ্য আছে।
র্যাব জানায়, ১৯৯২ সালে ঢাকার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাসের পরে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু মিথ্যা প্ররোচনা ও অনৈতিক কাজের জন্য সেখান থেকে চাকরি হারায় সে। এরপর ইরাকে চলে যান। এর পরে নিজেকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে চাকরি করতেন বলে পরিচয় দিতো। পরে, ইরাকে থাকা অবস্থায় কয়েকজন মিলে মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচারের সিন্ডিকেট গড়ে তোলে।
চক্রের মূল হোতা গ্রেফতার লিটন র্যাবের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে, সে নারীদের ইরাকের মেডিকেল হাসপাতালে চাকরির প্রলোভন দেখাতেন। এভাবে সখ্যতা গড়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পাঁচ-ছয়জনকে বিয়ে করেন। সে ২০১৩-২০১৮ পর্যন্ত ইটালিতে ছিলেন। এসব বিয়ে লিটন পাচারের উদ্দেশে করেছেন বলে দাবি র্যাবের।
র্যাব জানায়, সবশেষ পাচার হওয়া এক নারী জানিয়েছে, তাকে পাচার করার পরে ইরাকে সেফহাউজে রেখে দেয় এসময় সেখানে ১৫-২০ জনকে আসা যাওয়া করেত দেখেছেন। সেফ হাউজ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এই নারী ইরাকের একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। পরে, সেখান থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন ওই নারী।