প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: নুরুল ইসলাম ২০০১ সালে টেকনাফ স্থল বন্দরে চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ১৩০ টাকা হারে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরী জীবন শুরু করে। ২০ বছরের ব্যবধানে আজ রাজধানীসহ সারাদেশে ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছে। কিছু দিনে মধ্যে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার পিছনে কি বা আছে তার।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এসময় উপস্থিত ছিলেন র্যাব-৩’এর অধিনায়ক রকিবুল হাসান পিএসসি আর্টিলারি ও সহকারী অধিনায়ক মেজর রাহাত হারুন খান।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সে বন্দরে কর্মরত থাকাকালীন অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে চোরাকারবারী, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালিসহ প্রতারণার বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করার পাশাপাশি নিজেকে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন। এর পর ২০০৯ সালে চাকুরী ছেড়ে দেয়। পরে আস্থাভাজন একজনকে তার পদে কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করে। আর নুরুল নিজেই গড়ে তোলে দালালী সিন্ডিকেট চক্র।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৪৬০ কোটি টাকা। তার নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। বর্তমানে সে জাহাজ শিল্প ও ঢাকার সন্নিকটে বিনোদন পার্কে বিনিয়োগ করছে বলে জানা যায়। তার রাজধানীতে ৬টি বাড়ি ও ১৩টি প্লট রয়েছে। এছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে সর্বমোট ৩৭টি প্লট সহ বাগানবাড়ি তথ্য র্যাবের কাছে আছে।
তিনি বলেন, গতকাল রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাব-৩’এর যৌথ অভিযানে দালালীর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া টেকনাফ বন্দরের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম (৪১) নামের একজনকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট, ৩ লাখ ৮০ হাজার মিয়ানমার মুদ্রা, ৪ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা এবং নগদ ২ লাখ এক হাজার ১৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত নুরুল টেকনাফ বন্দর কেন্দ্রীক দালালী সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা। তার সিন্ডিকেটের ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে বলে জানা গেছে। যারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালী কার্যক্রমগুলো করে থাকে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথিমধ্যে অবৈধ মালামাল খালাসেও সক্রিয় ছিল।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কাঠ, শুটকী মাছ, বরই আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসত। চক্রটির সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বর্হিগমন নিয়ন্ত্রণ করত। গ্রেফতারকৃতের সাথে চিহ্নিত মাদক কারবারীদের সাথে যোগাােগ আছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও নুরুল অন্যান্য অবৈধ পণ্যের কারবারের জন্য হুন্ডি সিন্ডিকেটের সাথে সমন্বয় এবং চতুরতার সাথে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েজ কারসাজী করত। অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে সে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
তার প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল স্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।