ঢাকা, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩২, ১৭ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

বায়িং হাউসের আড়ালে মাদকের কারখানা


প্রকাশ: ১৮ জুন, ২০২১ ১০:৪২ পূর্বাহ্ন


বায়িং হাউসের আড়ালে মাদকের কারখানা

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বায়িং হাউসের নামে অফিস ভাড়া নিয়ে মাদক প্রক্রিয়াজাতকরণের ‘মেথ ল্যাব’ তৈরি করে একটি চক্র। সেখানে মাদক আইসের সঙ্গে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে পরিমাণে বাড়ানো, ইয়াবার রং পরিবর্তন কিংবা ইয়াবা-আইস-ঘুমের ওষুধের সমন্বয়ে ঝাক্কি বা ককটেল বানানো হতো বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শুধু মাদক প্রক্রিয়াজাতকরণই নয় কথিত ওই ল্যাবে নিয়মিত আনাগোনা ছিল মাদকসেবী তরুণ-তরুণীদের। তারা সেখানে মাদক সেবন এবং পরবর্তিতে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতো। চক্রটি কৌশলে সেসব কার্যকলাপ ভিডিও করে রাখতো, যা দিয়ে পরবর্তিতে তাদের করা হতো ব্ল্যাকমেলিং।

শুক্রবার (১৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এসময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-৩'এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোঃ রাকিবুল হাসান পিএসসি ও উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ রাহাত হারুন খান।

আটককৃতরা হলেন- মূলহোতা তৌফিক হোসাইন (৩৫), জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন (৩৭), আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র (৩৫), রাকিব বাসার খান (৩০), সাইফুল ইসলাম ওরফে সবুজ (২৭) ও খালেদ ইকবাল (৩৫)। এসময় তাদের কাছ থেকে আইস, ইয়াবা, বিদেশি মদ, গাঁজা এবং ১৩টি বিদেশি অস্ত্র, রেপলিকা অস্ত্র ও ইলেকট্রিক শক যন্ত্র, মাদক সেবনের সরঞ্জাম ও ল্যাবরেটরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে র‌্যাব-৩।

র‌্যাব জানায়, এ চক্রে ১০ থেকে ১৫ জন রয়েছেন। তারা মাদক আইস ও ঝাক্কি সেবন-কেনাবেচায় জড়িত। এর বাইরে এ সার্কেলে ৪০ থেকে ৫০ জন রয়েছেন, যারা নিয়মিত এই চক্রের মাদকের ক্রেতা। আইস মাদকটি দামী হওয়ায় সাধারণত বেশিরভাগ ক্রেতাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) রাতে রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই চক্রের মূলহোতাসহ ৬ জনকে আটক করে র‌্যাব-৩।

র‌্যাব-৩'এর হাতে আটককৃত ৬জন

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানায়, চক্রের মূলহোতা ও সমন্বয়কারী তৌফিক। অর্থ যোগানদাতা জুবেইন ও খালেদ। রুদ্র কেমিস্ট হিসেবে ‘মেথ ল্যাব’ পরিচালনা করতেন। আর সবুজ মাদক সংগ্রহ ও সরবরাহকারী এবং তৌফিকসহ বাকিরা মাদক বিপণনের সঙ্গে জড়িত। রুদ্রর নামে তিনটি মাদক মামলা রয়েছে এবং জুবেইনের নামে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে জুবেইন লন্ডন থেকে বিবিএ, তৌফিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, খালেদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ এবং রুদ্র ও সাইফুল এইচএসসি পাস।

খন্দকার আল মঈন বলেন, তাদের মেথ ল্যাবটি মূল কেমিস্ট এইচএসসি পাস রুদ্র ও তার কয়েকজন সহযোগীরা পরিচালনা করতেন। তারা আইস ও ইয়াবার পরীক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। বাজার থেকে বিভিন্ন ওষুধ ও কেমিক্যাল আইসের সঙ্গে মিশিয়ে পরিমাণ বাড়িয়ে বিক্রি করতেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ইয়াবার রং পরিবর্তন এবং ঝাক্কি তৈরি করতেন। ঝাক্কি তৈরিতে তারা তরল পানীর সঙ্গে ইয়াবা, ঘুমের ওষুধ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় ওষুধ মেশাতেন।

তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত ইয়াবা সেবনে চরম আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছায়। পরবর্তীতে আসক্তির মাত্রা বাড়াতে বিগত কয়েক বছর ধরে তারা আইস গ্রহণ শুরু করেন। তারা বিভিন্ন সময়ে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের নেশায় উদ্বুদ্ধ করতেন। তৌফিককে আমরা চক্রের মূল সমন্বয়ক হিসেবে পেয়েছি। আগে তারা ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই বছর ধরে নতুন মাদক আইস নিয়ে কাজ শুরু করেন। সময়ের প্রয়োজনে এখন ঝাক্কি প্রস্তুত করছিলেন তারা।

তিনি বলেন, চক্রটি টেকনাফ, মিরপুর, গুলশান-বনানীর বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে আইস সংগ্রহ করে সেগুলো তাদের সার্কেলে সরবরাহ করতেন। এই একটি গ্রুপের বাইরে আরো কয়েকটি ক্লোজ গ্রুপ রয়েছে বলে জানতে পেরেছে তাদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত হয়েছে।

অস্ত্রের ব্যবহার প্রসঙ্গে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক জোবেইনের এইম গেমিংয়ের নেশা ছিল। মাদকাসক্তের পর তারা এই অস্ত্র দিয়ে এইম গেমিংয়ের নামে জুয়াও খেলতেন। এছাড়া যারা মাদক গ্রহণের জন্য আসতো তাদের ভয়ভীতি পরিদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হতো।


   আরও সংবাদ