প্রকাশ: ২৭ মে, ২০২১ ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন
র্যাব-৩ এর অভিযানে চট্রগ্রামের সীতাকুন্ড, ফেনীর দাগনভুঁইয়া এবং ঢাকার পল্টন এলাকা হতে মানবপাচাকারী চক্রের ০৪ জন সক্রিয় সদস্য আটক।
এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহিৃতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। বর্তমান সময়ে মানবপাচাকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ফাঁদ, যেমন বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ জনগণের সরলতার সুযোগ নিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী মানবপাচারকারী চক্র। এ ধরনের মানবপাচারকারী চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা সচেষ্ট।
এরই ধারাবাহিকতায় ভিক্টিম আলফাই আল হোসাইন (২২) অভিযোগ দায়ের করেন যে, ডিউটি ৮ ঘন্টা, থাকা ফ্রি, খাওয়া নিজের, বেতন ৫৫,০০০/-(পঞ্চান্ন হাজার) টাকা এবং এক বছর পর ছুটির জন্য বিমান ভাড়া কোম্পানী দিবে শর্তে ক্রোয়েশিয়ায় শীপ রেষ্টুরেন্ট এর ভাল কাজের ভিসা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচারকারী চক্র তাকে ক্রোয়েশিয়া যাওয়ায় রাজী করে। ক্রোয়েশিয়া যাওয়ার খরচ বাবদ আসামীদের সাথে তার ৮,৫০,০০০ টাকা প্রদানের চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী আসামীরা প্রথমে ভিক্টিমের ভারতীয় ভিসা তৈরী করার পর ক্রোয়েশিয়ার ভিসা তৈরীর জন্য তাকে দিল্লীতে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর ৪৫ দিন মেয়াদি ক্রোয়েশিয়া ভিসা টাইপ সি ১ ভিসা ভিক্টিমের জন্য অনুমোদন করানো হয়। সারাবিশ^ করোনা মহামারীতে বিপর্যস্থ হলেও মানবপাচারকারীরা ভিক্টিমকে ২৩ ফেব্রæয়ারি ২০২১ তারিখে তার্কিশ এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে ক্রোয়েশিয়ার জাগরিব এলাকায় প্রেরণ করে। ক্রোয়েশিয়ায় যাওয়ার পর ক্রোয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী দালাল মোঃ সাইফুল ইসলাম (৪২), পিতা-মৃত আহসান উল্লাহ, সাং-জগতপুর, থানা- দাগনভূঁইঞা, জেলা-ফেণী ভিক্টিমকে বিদেশী দালালদের নিকট ১৫০০ ই্উরোতে বিক্রি করে। তখন ভিক্টিম বুঝতে পারে যে, সে মানবপাচারকারীদের কবলে পড়েছে।
বিদেশী দালালরা ভিক্টিমকে স্কোভেনিয়া হয়ে ইতালিতে প্রেরণের জন্য ভিক্টিমের নিকট ০৩ লক্ষ টাকা দাবী করে। তখন ভিক্টিমের পরিবার ১নং আসামির একাউন্টে ০৩ লক্ষ টাকা প্রেরণ করে। ইতোমধ্যে ভিক্টিম জানতে পারে বিদেশী দালালরা ভিক্টিমদের স্থল পথে স্কোভেনিয়া হয়ে ইতালি প্রেরণ করে। উক্ত স্থল পথ অত্যন্ত দূর্গম, প্রতি পদে মৃত্যুর ভয় রয়েছে। আর যারা স্থল পথে যেতে আগ্রহী হয়না তাদেরকে স্পীডবোটে করে জল পথে ইতালি প্রেরণ করে। তখন ভিক্টিম পরিবারের সাথে আলোচনা করে বাংলাদেশে ফেরত আসার ব্যবস্থা করার জন্য ১নং আসামিকে অনুরোধ জানায়। এরপর ভিক্টিমের উপর বিদেশী দালালদের নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। তখন ভিক্টিম পালিয়ে এসে ক্রোয়েশিয়ায় অবস্থিত সংস্থায় যোগাযোগ করে। তাদের সহযোগিতায় ভিক্টিম ১২/০৫/২০২১ তারিখে কাতার এয়ারওয়েজ বিমানে করে বাংলাদেশে ফিরে আসে। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড হতে ২৭/০৫/২০২১ তারিখ সকাল ০৬.৩০ ঘটিকায় ১। মোঃ কামরুল হাসান চৌধুরী (৪০), ২। মোঃ মঈনউদ্দীন হাসান চৌধুরী (৪৪), উভয় পিতা-মৃত চৌধুরী শামসুদ্দীন আহম্মেদ, মাতা-মৃত জাহানারা শামসুদ্দীন চৌধুরী, সাং-বাড়ী নং-৬৭৬, ওয়ার্ড নং-৭, আমিরাবাদ, থানা-সীতাকুন্ড, জেলা-চট্টগ্রাম, ফেনীর দাগনভুইয়া হতে ২৭/০৫/২০২১ তারিখ ১০.৩০ ঘটিকায় ৩। মোঃ নিজাম উদ্দিন মাসুদ (৩৮), পিতা-আবদুল আলী, মাতা-হোসনে আরা বেগম, সাং-ধর্মপুর, ডাকঘর-ছমিভ‚ঞাঁর হাট, থানা-দাগনভ‚ঁঞা, জেলা-চট্টগ্রাম এবং রাজধানীর পল্টন এলাকা হতে ২৭/০৫/২০২১ তারিখ ১৫.১৫ ঘটিকায় ফেয়ার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ৪। মোঃ জালাল উদ্দীন (৫৫), পিতা-মফিজ উদ্দিন, মাতা-জাকিয়া বেগম, সাং-সাহারখোলা মামুদপুর, ডাকঘর-হাসিমপুর মৌলভী বাজার, থানা-রায়পুরা, জেলা-নরসিংদীসহ মানবপাচার চক্রের ০৪ সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়। ধৃত আসামীদের নিকট থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ, চেকবই ও সিল জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীরা মানবপাচারের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। উল্লেখ্য যে, আসামী সাইফুল ইতিপূর্বে র্যাব-৩ কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তার নামে দাগনভ‚ থানায় মানবপাচার মামলা নং-১৬, তারিখ-২৪/০১/২০২১ ইং, ধারা-মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৭/৮/১০ তদন্তাধীন রয়েছে। উক্ত মামলায় জামিন নিয়ে সে ক্রোয়েশিয়ায় পালিয়ে যায়।
উক্ত গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে চট্রগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।