প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওই সময় আমি বিরোধী দলে ছিলাম। খুব বেশি করার ক্ষমতা আমার ছিল না। বিদেশ যাওয়ার সময় বিমান ব্যবহার করতাম। তখন দেখতাম বিমানগুলো ছিল ঝরঝরা। ছাদ ফুটো ছিল, পানি পড়ত। টিস্যু গুঁজে দিয়ে পানি পড়া থামানো হতো। এখন সেই অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রিমলাইনার রাজহংসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে ঢাকায় একধরনের ঝরঝরা বাস চলত। আমরা এই বাসগুলোকে বলতাম মুড়ির টিন। তখন বিমানের অবস্থা ছিল এই মুড়ির টিনের মতো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর বিমানের আগের অবস্থা নেই। এখন বিমানে উঠলে গর্বে বুক ভরে যায়। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে পাঁচবছর ছিলাম। বিমানের উন্নয়নে তখন বেশি কিছু করতে পারিনি। কারণ টাকা-পয়সার ব্যাপার ছিল। এখন আমাদের যে রিজার্ভ আছে সেখান থেকে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে আরও দুটি উন্নতমানের বিমান কিনতে পারব। আমাদের সেই পরিকল্পনা আছে।

বিমানের উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি সাড়ে তিনবছর মাত্র সময় পেয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে গুছিয়ে আনতে শুরু করেছিলেন। আজকে বিমানের যে লোগো সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জয়নুল আবেদীনসহ শিল্পীদের নিয়ে কমিটি করে দিয়েছিলেন। সেখানেই লোগো চূড়ান্ত করা হয়। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই, এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে এক অগ্রগতি অর্জন করলেন।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত রিজার্ভ আমাদের আছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এদেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সর্বাত্ম চেষ্টা চালাচ্ছি।’
ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী কেক কাটেন ড্রিমলাইনার রাজহংসের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোকাব্বির হোসেইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক, বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) মুহাম্মাদ এনামুল বারী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ড্রিমলাইনার রাজহংস হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ড্রিমলাইনার ‘রাজহংস’। তার আগে, লাল ফিতা কেটে নতুন ড্রিমলাইনারের যাত্রার উদ্বোধন হয়। বাংলাদেশ বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন শোয়েব চৌধুরী, ক্যাপ্টেন সরওয়ার, ফার্স্ট অফিসার জামিল ও আতিয়াব একটানা ১৫ ঘণ্টা চালিয়ে ড্রিমলাইনারটি নিয়ে আসেন।
গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ বিমানের বহরে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত ও সম্পূর্ণ নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ‘রাজহংসের’। কিন্তু রাডার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে অতিরিক্ত ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছিল বোয়িং কোম্পানি। এটি যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা এখন ১৬টি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হওয়া চারটি ড্রিমলাইনারের নাম পছন্দ ও বাছাই করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হলো আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাঙচিল ও রাজহংস।
উল্লেখ্য, এর আগে ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ২টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০-ইআর এর নামও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। সেগুলো হলো- পালকি, অরুণ আলো, আকাশ প্রদীপ, রাঙা প্রভাত, মেঘদূত এবং ময়ূরপঙ্খী।
টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এই ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে। ‘রাজহংস’-এর আসন সংখ্যা ২৭১টি। বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত রিক্লাইন্ড সুবিধা এবং সর্ম্পূণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরামদায়কভাবে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবেন। বিমানটিতে যাত্রীরা অন্যান্য আধুনিক সুবিধা, ইন্টারনেট ও ফোন কল করার সুবিধাও পাবেন।