ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

করোনা থেকে জীবন বাচাতে পারে যুক্তরাজ্যের এ ওষুধ!


প্রকাশ: ১৫ জুন, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


করোনা থেকে জীবন বাচাতে পারে যুক্তরাজ্যের এ ওষুধ!

   

বিএন নিউজ ডেস্ক : সস্তা ও ব্যাপকভাবে সহজলভ্য ওষুধ ডেক্সামেথাসোন (Dexamethasone) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের জীবন বাঁচাতে পারে বলে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন।

যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কম ডোজের স্টেরয়েড ট্রিটমেন্ট যুগান্তকারী সাফল্য।

এই ডেক্সামেথাসন ওষুধটি ভেন্টিলেটর সাপোর্টে এ থাকা রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেয় এবং অক্সিজেন সাপোর্টে থাকা রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি এক-পঞ্চমাংশ কমিয়ে দেয়।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়

ওষুধটি শুধু মাত্র হাসপাতালে থাকা গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যাবে। শরীরের এই ওষুধের ওভার-রিঅ্যাকশন মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই কোনোভাবে এই ওষুধটি বাড়িতে নেওয়া যাবে না এবং নিজে নিজে ওষুধটি গ্রহণ করা যাবে না বলে সর্তক করেছেন গবেষকরা।

ডেক্সামেথাসোনকে(Dexamethasone) করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রথম জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসেবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের উদ্বৃতি দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ জন করোনারোগীর মধ্যে ১৯ জনই কোনো হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়া সুস্থ হচ্ছেন। যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদেরও অধিকাংশ সুস্থ হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের রোগীদের মধ্যে কারো কারো অক্সিজেন এবং মেকানিক্যাল সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে। এই উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের সুস্থ হতে ডেক্সামেথাসোন (Dexamethasone) সহায়তা করে।

ওষুধটি ইতোমধ্যে অন্যান্য অবস্থায় বিভিন্ন পরিসরে ইনফ্ল্যামেশন কমাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ডেক্সামেথাসোন ওষুধটি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে কিছু ক্ষতি (damage) থামাতে সহায়তা করে।

শরীরে ডেক্সামেথাসোনের অতি-প্রতিক্রিয়া বা ওভার-রিঅ্যাকশনকে সাইটোকাইন ঝড় (cytokine storm )বলে এবং এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দলের নেতৃত্বে ওষুধটি পরীক্ষা বা ট্রায়ালের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালের প্রায় দুই হাজার রোগীকে ডেক্সামেথেসোন দেওয়া হয়েছিল এবং তুলনা করার জন্য চার হাজার রোগীর ক্ষেত্রে এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়নি।

ট্রায়ালে দেখা যায় ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই ওষুধটি ৪০ থেকে ২০ শতাংশ মৃত্যুরঝুঁকি কমায় এবং যেসব রোগীদের অক্সিজেন নেওয়া প্রয়োজন হচ্ছিলো তাদের ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ২০ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমায়।

প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক পিটার হরবাই (Prof Peter Horby) বলেন, এটিই একমাত্র ওষুধ যেটি মৃত্যুহার কমিয়েছে দেখা গেছে এবং এটি কমিয়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। এটি অনেক বড় যুগান্তকারী সাফল্য।

বিদ্যমান চিকিৎসার মধ্যে করোনা ভাইরাসের জন্যও কাজ করে কিনা তা দেখতে বিশ্বের বৃহত্তম ট্রায়াল টেস্টিং এর অংশ এই ওষুধ।

গবেষকরা অনুমান করছেন করোনা ভাইরাস মহামারির শুরু থেকে ওষুধটি যুক্তরাজ্যে সহজলভ্য থাকতে তবে এর মাধ্যমে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো। কারণ এটি সস্তা। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলো এই ওষুধ হতে ব্যাপক সুবিধা পেতে পারেন।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক মার্টিন ল্যান্ড্রেই (Prof Martin Landray) বলেন, অনুসন্ধান বলছে ভেন্টিলেটরে থাকা প্রতি আটজন রোগীর মধ্যে এই ওষুধের মাধ্যমে একজনকে বাঁচানো যেতে পারে। আর যারা অক্সিজেন নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে প্রতি ২০ থেকে ২৫ জনের মধ্যে একজনের জীবন বাঁচানো যেতে পারে এই ওষুধের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার, পরিষ্কার সুবিধা। একজন রোগীর চিকিৎসায় ১০ দিনে ডেক্সামেথাসোনে খরচ পড়বে ৩৫ ইউরো (৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা) মানে ৩৫ ইউরোতে একটি জীবন বাঁচানো সম্ভব। এই ওষুধটি সারা বিশ্বে সহজলভ্য।

অধ্যাপক মার্টিন ল্যান্ড্রেই বলেন, যখন প্রযোজ্য হবে  দেরি না করে হাসপাতালের রোগীদের ওষুধটি দেওয়া উচিত। কিন্তু কোনোভাবেই চিকিৎসক ছাড়া সাধারণ মানুষের এটি কিনে বাড়িতে নেওয়া বা নিজে নিজে এই ওষুধ নেওয়া কোনোভাবে ঠিক হবে না। করোনা ভাইরাসে মৃদু লক্ষণে এই ডেক্সামেথাসোন মানুষকে কোনো সাহায্য করতে পারে না।

করোনা ভাইরাসে রিকভারি ট্রায়াল মার্চ মাস থেকে চলছে। এর মধ্যে ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনাইন রয়েছে যেটি পরবর্তীতে মৃত্যু বৃদ্ধি এবং হার্টে সমস্যা তৈরির জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

অন্য একটি ওষুধ রেমডিসিভির একটি অ্যান্টিভাইরাল ট্রিটমেন্ট হিসেবে এর ক্ষেত্রে দেখা গেছে ওষুধটি করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের সুস্থ হওয়ার সময় কমিয়ে আনে। ওষুধটি তৈরি করে সহজলভ্য করা হচ্ছে।

রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস এবং অ্যাজমার মতো বিভিন্ন রোগে গুরুতর অবস্থায় ডেক্সামেথাসোন ১৯৬০ সালের শুরু থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।


   আরও সংবাদ