ঢাকা, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ চৈত্র ১৪৩২, ১৬ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

পরকীয়া ও সম্পত্তি হারানোর আতঙ্কে স্ত্রীকে খুন করল নজরুল


প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:০৯ পূর্বাহ্ন


পরকীয়া ও সম্পত্তি হারানোর আতঙ্কে স্ত্রীকে খুন করল নজরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: মর্মান্তিক খুনের মধ্য দিয়ে প্রায় দুই দশকের সাজানো–গোছানো সংসার শেষ সন্দেহে আর ক্রাদ্ধে। স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক (পরকীয়া) আছে এই সন্দেহ ও সম্পত্তি হারানোর আতঙ্কে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন স্বামী নজরুল ইসলাম (৫৯)।

গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বংশাল থেকে নজরুলকে গ্রেপ্তার করে কলাবাগান থানা পুলিশ। এরপর এসব তথ্য সামনে নিয়ে আসে পুলিশ। হত্যায় ব্যবহৃত দা’টি ওই বাসার ওয়ারড্রোব থেকে উদ্ধার করা হয়।

আজ বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। 

তিনি বলেন, তাদের সংসারজীবন ছিল ২০ বছরের। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন থেকেই আসামি নজরুল তার স্ত্রীর ওপর অবিশ্বাস পোষণ করে আসছিলেন। সন্দেহ করতেন তার স্ত্রী পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছেন এবং যেকোনো সময় তার ব্যাংক থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে চলে যেতে পারেন।

গত ১২অক্টোবর রাতে কলাবাগান এলাকার নিজ ফ্ল্যাটে ফিরে তিনি দেখেন দরজার দুটি লক খোলা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী তাসলিমাকে ধারালো দা দিয়ে কোপাতে থাকেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান তাসলিমা। পরে তিনি লাশ গামছা ও চাদরে মুড়িয়ে বাসার ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন। এরপর রক্তের দাগ মুছে ফেলেন এবং জামাকাপড় ধুয়ে আলামত গোপনেরও চেষ্টা করেন। পরদিন সকালে মেয়েদের বলেন, তোমার মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। এরপর সন্তানদের ফুফুর বাসায় রেখে নিজে প্রাইভেটকারে নিয়ে পালিয়ে যান।

পরিবারের সন্দেহ হওয়ায় বিসয়টি পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটে ঢুকে এলোমেলো দেখে খোজাখুজি করতে থাকেন। একপর্যায়ে ফ্রিজ খুলে চাদরে মোড়ানো তাসলিমার মরদেহ উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই নাঈম হোসেন ১৩ অক্টোবর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। নজরুল ইসলামকে বংশাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিসি মাসুদ আলম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল জানায় স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ ও সম্পত্তি হারানোর ভয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে। পুলিশ জানায়, তার ব্যাংকে এক কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট এবং আরও ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয় ছিল—যার নমিনি ছিলেন তার স্ত্রী তাসলিমা। চরম সন্দেহ, নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা ও আর্থিক নিরাপত্তাহীনতাই এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ।

গতকাল আসামি নজরুলকে স্ত্রী হত্যা মামলায় আদালতে তোলা হয়। সেখানে তিনি দ্বায়স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন ডিসি মাসুদ।


   আরও সংবাদ